ভৌম দোষ ও তা ভঙ্গ
.....................................................................................
১) লগ্নের ২য় ও ৭ম স্থান পাপ গ্রহ যুক্ত হ’লে পতি/ পত্নী
হানি যোগ হয়। (কিন্তু বর ও বৌ উভয়ের জন্ম পত্রিকাতে এই একই যোগ থাকলে তা ভঙ্গ হয়।)।
২) মঙ্গল ৭মে থাকিলে জাতকের ৭মস্থ মঙ্গলকে শনি দেখলে নিশ্চই
স্ত্রী হানি হয়।(কিন্তু বহু শুভ দৃষ্ট হইলে স্ত্রী হানি হয় না)।
৩) ভৌমবরত্তি দোষ- লগ্ন, ৪রথ, ৭ম, ৮ম, ১২শ, উহার যে কোন
স্থানে মঙ্গল থাকিলে পুরুষের স্ত্রী হানি এবং
বধূর পতি হানি যোগ হয়।কিন্তু যদি ঐ মঙ্গল শুভাধিক- বর্গ গত হইলে অরথাত মঙ্গল উচ্চ,
মুলত্রিকোন, স্বগৃহ, মিত্রগৃহস্থি্ত হইয়া শুভ দৃষ্ট হন, কিংবা উক্তরূপ শুভ স্থানে
কেন্দ্র-কোনাধিপ-মঙ্গল বলবান শুভগ্রহদৃষ্ট বা মিত্রগ্রহদৃষ্ট হইয়া গুনবাহুল্যযুক্ত
হন অথবা উভয়েরই মঙ্গল পরস্পর পতি/ পত্নী হানি যোগে থাকিয়া একরূপ ধরমাক্রান্ত হন,
সেরূপ স্থলে ভৌমদোষে বিবাহ কোন অনিষ্ট হয় না। ৪) কোন এক নিয়মে পুরুষের যদি পত্নী
হানি যোগ থাকে ও অন্য নিয়মে কন্যার বৈধব্য থাকে সেখানে পরস্পর দোষ ভঙ্গ হবে ও
বিবাহ দেওয়া যাবে।
৫) উপরিউক্ত (৪) নিয়ম ভৌম দোষের ক্ষেত্রে খাটবেনা।
সেখানে ভৌম দোষে ভৌম দোষে কাটাকাটি প্রয়োজন।আরথাত বর/ বৌ উভয়ের কুষ্ঠীতেই ভৌম দোষে
থাকা দরকার।(গুন বাহুল্য যুক্ত মঙ্গলে ভৌম দোষ বর্তায়না।)
৬) তবে এরূপ যদি হয় যে, বধূর ভৌম দোষ আছে, অথচ তাহার
লগ্নের ৭মে বা চন্দ্রের ৭মে বলবান শুভগ্রহ বা বলবান সপ্তমাধিপ আছেন এবং গুরু-শুক্র
কেন্দ্র-কোনে; সেরূপ স্থলে পুরুষের ভৌম দোষ না থাকিয়া যদি অন্য নিয়মে ( ৭মে রাহু ও শুক্র পাপ যুক্ত ) স্ত্রী হানি যোগ
থাকে, তবে উক্ত ভৌমদোষযুক্তা বধূর বিবাহে অনিষ্ট হয় না।
৭) ভৌম দোষ পরিহার- বৃহজ্জোতিঃসার- গ্রন্থে উক্ত হিয়াছে
যে, লগ্ন,৪রথ, ৭ম, ৮ম, ১২শ, ইহাদের কোন স্থানে শনি বা রাহু থাকিলে (যেমন বিষে
বিষক্ষয় হয় তেমনি) উক্ত স্থানস্থিত ভৌম দোষ নষ্ট হয়। যদি বধূর লগ্নে মঙ্গল ও ৭মে
রাহু বা শনি থাকে তাহলে পতি-সৌভা্গ্য-স্থান অতি অশুভ বলিয়া বিবেচিত হয় বটে, কিন্তু
বস্তুত ভৌম দোষ নষ্ট হয় ও শুভ হয়।
(জ্যোতিষ-কল্প বৃক্ষঃ- পৃষ্ঠা ৫২০)
৮) বরাহ মিহির তাঁহার ‘ বৃহজ্জাতক’ গ্রন্থের ২৪শ অধ্যায়ে
বলিয়াছেন-
“তাসান্তু ভরত্তৃমরণং নিধনে বপস্তু লগ্নেন্দুগমিত্যাদি”-
অরথাত লগ্ন হইতে অষ্টম ভাবে স্ত্রী গনের বৈধব্য- বিচার এবং লগ্ন-চন্দ্র উভয় হইতে
শরীরের শুভাশুভ বিচার করিতে হয়। জ্যোতিঃশাস্ত্র মতে ভাব বিচারে দেখা যায় যে, লগ্ন
হইতে অষ্টম ভাবে নরনারীর জননেন্দ্রিয় বিচার করা হয়।অতএব ৭ম ভাব হইতে যৌন- চেতনা
(কাম) এবং ৮ম ভাব হইতে জীবনী শক্তি ক্ষয় বা যৌনাকর্ষণ বিচার করা হয়। ৮ম ভাব একদিকে
যেমন নূতন জীবের সৃষ্টি করে, অন্যদিকে তেমনি একটি পূর্ণ জীবনের ক্ষয় করিয়া থাকে।
৮ম ভাব হইতে আয়ুরব্বিচার করিবার ইহাও একটি প্রধান কারন। অতএব ৭ম ভাব হইল কাম বা
যৌ্নচেতনা্র আধার বা অবলম্বন- স্ত্রী বা স্বামী। পক্ষান্তরে ৮ম ভাব হইল
যৌনাকর্ষণের জীবনী শক্তি ক্ষয়ের অবলম্বন- জননেন্দ্রিয়। মঙ্গলের ন্যায় উগ্রশক্তি
সম্পন্ন গ্রহ যদি ৮মে থাকে, তাহা হইলে নরনারীর যৌনাকর্ষণের স্নায়ু সমূহ উগ্রতেজ
সম্পন্ন হয়।তাহার ফলে পূর্ণ সাস্থ্যবান পুরুষ যদি ৮ম ভাবগত মঙ্গল- প্রভাবিত স্ত্রীর সহিত যৌনধর্ম রক্ষা
করে, তাহা হইলে সেই পুরুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জীবনী শক্তিক্ষয় হইয়া ব্যাধি হয়,
এমনকি অকাল মৃত্যু ঘটিয়া থাকে।একই যোগে পুরুষের লগ্নের ৮মে মঙ্গলের ন্যায়
উগ্রশক্তি সম্পন্ন গ্রহ থাকলে স্ত্রীর স্বাস্থ্য হানি বা অকাল মৃত্যু হতে
পারে।এখানে ভৌম দোষ খণ্ডনের জন্য মিলিয়ে বিবাহের বিধান দেওয়া হয়, যদি কোন শুভ
গ্রহের প্রভাব ওই মঙ্গলের উপর না থাকে,তাহা হইলে উভয়ে ব্যাধিগ্রস্ত হয়। দম্পতির
অকালমৃত্যু হয়।
কন্যার বৈধব্যদোষের খণ্ডন হইল – স্বাস্থ্যবান দীর্ঘায়ু
যুক্ত পাত্রের সহিত বিবাহ দেওয়া।দম্পতির পরস্পরের ৮মে পাপগ্রহের মিলনে বিবাহ হইলে
অশান্তি অনিবার্য। বর ও বধূর উভয়ের জণ্ম রাশি, লগ্ন্, লগ্নাধিপতি, ও রাশ্যাধিপতি যদি ষড় অষ্টম যোগে থাকে তাহলে কলহাদি ও অশান্তি অমঙ্গল হয়ে থাকে।
তরুণ কুমার
বন্দ্যোপাধ্যায়। (জ্যোতিঃশাস্ত্রী)