“এঁড়ে তর্ক”
বাঙ্গালীর আড্ডায়
সাধারণত তিন ধরনের মানুষ দেখা যায়।একদল বক্তা।একদল শ্রোতা।আর একদল থাকে যাদের বলার মতো স্টকে কিছু থাকে না,আবার চুপচাপ শূনতে
ও পারে না।হয় তারা কারো কথার মাঝে তর্ক জুড়ে দেয়, নয়ত বলে ওঠে “মানতে পারলাম না”।কিন্তু কেণ যে মানতে পারা গেল না বা কী হলে যে মানা যেত সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা নীরব থাকে। তারা রামগরুড়ের ছানার মতো একটা কপট গাম্ভীর্য নিয়ে সভার এক
কোনে বসে থাকে,আর মাঝে মাঝে ফোড়ণ কাটে। আড্ডা
অনেক প্রকারের হয়।অফিসের আড্ডা,পাড়ার ক্লাবের আড্ডা।কলেজের কমন
রুমের আড্ডা। তবে আলোচ্য আড্ডাটি কলিকাতা শহরের একটি নাম করা ইস্কুলের
প্রাক্তনীদের আড্ডা।এই আড্ডাটি অনেক দিক থেকেই অভিনব।যেমন এর সব সভ্যরাই এককালে
একে অপরের হরিহর আত্মা ছিলেন। কিন্তু গত প্রায় চল্লিশ বছর যে যার কর্ম স্থলে ব্যস্ত থাকায়,বিশেষ যোগাযোগ ছিল না।তাঁরা
সকলেই আজ অবসরপ্রাপ্ত,সুতরাং হাতে প্রচুর সময়।আবার সকলের না হলেও কারও কারও হাতে অঢেল পয়সা।সাধারণত মাসের প্রথম রবিবারেই কোথাও একটা তাঁরা
আড্ডায় বসেন।আগে যারা খাতা বইয়ের ব্যাগ কাঁধে ছুটতে ছুটতে স্কুলে আসতেন , এখন তাঁরা কেউ
খোঁড়াচ্ছেন,কেউ হাঁপাচ্ছেন,কেউ বা আবার বাতের ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। সব আড্ডাতেই যেমন
প্রথম আলোচ্য বিষয় হয়ে থাকে আজকের হট নিউজ,এখানে ও তাই আজকের প্রথম আলোচনা ছিল
কঙ্কাল কাণ্ড নিয়ে।তারপর কিছু সময় যেতেই আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াল খাদ্যাখাদ্য। কি
কি খাওয়া ভাল, কি খেলে কি হয়। অবসর প্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক এবং বর্তমানে হার্টের
রুগী অবিনাশ সেন বললেন-“ ওই নুনটাই যত নষ্টের গোড়া, পাতে কাঁচা নুন খেয়েছ কি
মরেছ”। সুগারের রুগী অবসর প্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মহাদেব মহাপাত্র বললেন-“ না না
নুন নয়, চিনি জিনিষটাই খারাপ”।অম্বলের রুগী অবসর প্রাপ্ত ব্যাংক আধিকারিক তিলক বোস
বললেন-“ চিনি ও নয় নুন ও নয় যত নষ্টের গোড়া, বাঙালীর রান্নায় তেল মশলা”।সদ্য জন্ডিস থেকে সেরে উঠা অবসর প্রাপ্ত মেরিন
ইঞ্জিনিয়ার অলোক বসু মহাশয় বললেন –“
চাকুরী জীবনে যদিও আমি সাতও নয় সত্তরও নয় সাত’শ ঘাটের জল খেয়েছি, তবু বলব জলই সব
থেকে বিপদজনক”।অতীতের ব্যায়াম বিদ বর্তমানে অসুখে ভুগে ভুগে,ব্যায়রাম বিধ অরুণ সাহা বললেন
“ওসব কিছুই নয়,শরীরের যত্ন নেওয়াটাই আসল ব্যাপার”। তার কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেল।
অনেকে একসঙ্গে বলে উঠল-“আমাদের মধ্যে তুমিই তো সব থেকে বেশী শরীরের যত্ন নিতে হে,
তা তোমার এই হাল কেন”?
“অতিরিক্ত কোন
কিছুই যে ভাল নয় সেটা ঠেকে শিখলাম” বললেন অরুণ বাবু।
কোনের টিপ্পনী
–“যৌবনের অত্যাচার এখন বুড় বয়সে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে। ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পে যতই
হেলথ চেক আপ করাও, হৃত যৌবন আর ফিরবে না”।
হাফ রিটায়ার্ড
রোড কনট্রাক্টর ভোলা সেন বললেন-“আমার মনে হয় পরিবেশ দূষণ আর ভেজাল খাবারই সব সমস্যার মূল কারন। সে জন্য আমাদের সকলেরই উচিৎ মাঝে মাঝে চেঞ্জে যাওয়া। চল সবাই মিলে আমরা
কোথাও গিয়ে হাওয়া বদলে আসি”।মিস্টার সেনের প্রোপসাল শুনে সবাই
একসঙ্গে ছেলে মানুষের মতো হৈ হৈ করে উঠলেন। ভোলা একেবারে সকলের মনের কথাটি
বলেছে।তারপর শুরু হ’ল কোথায় যাওয়া যায় না যায় তাই নিয়ে আলাপ আলোচনা, তর্কবিতর্ক। অবিনাশ
বললেন-“বুঝলে, চাকরি জীবনে কলকাতার বাইরে অনেক ভাল ভাল জায়গায় পোস্টিং পেলেও ফ্যামিলির
জন্যে মনটা পড়ে থাকত কলকাতায়।আর ছুটি পেলেই সটান এখানে এসে হাজির হতাম।তাই সেসব
জায়গা গুলো তেমন ভাল করে দেখা হয়নি উপভোগও করা হয়নি।এইবার যেতে হবে”।কোন থেকে একজন
ফোড়ন কাটল-“সে সব ভুলে যাও চাঁদু।একে তো বুড় বয়সে ওসব ধকল আর প্রানে সইবেনা,তায় অবসর নেবার পর আর আগের খাতির ও পাবেনা”।মহাদেব বললেন -“আমাদের
ছোট বেলায় কলকাতার আশেপাশে অনেক পাড়াগাঁ ছিল, এখন আরনেই”?অরুণ বললেন-“ নাঃ যখন
থেকে গ্রামে কারেন্ট ঢুকেছে, পার্টি পলিটিক্স ঢুকেছে, আর পীচের রাস্তা হয়েছে,
গ্রাম গুলর চেহারাই পালটে গেছে।না আছে গাছে পাখী, না আছে জলে মাছ।মাঠে ঘাটে আর গরু মোষ
চরে না।পুকুর থেকে হাঁসের দল গুগলি তুলে
খায় না।গাছের ডালে বসে হনুমান ঠ্যাং নাচায় ণা।বর্ষার রাতে কোলা ব্যাং এর ডাক শোণা
যায় না।এমনকি সদা হাস্যময় চিন্তা ভাবনা হীন নিষ্পাপ সরল সেই গ্রাম্য মানুষটির ও আর
দেখা মেলে না”।
ভোলা বললেন –“বলিস
কিরে, তারা সব গেল কোথায়”? মণিময় রায় বললেন –“ পরিবেশ দূষণ আর পার্টি বাজির
ঠ্যালায় বেশীর ভাগই তারা মারা পড়েছে।বাকিরা পালিয়ে বেঁচেছে।তবে আমার সন্ধানে এক
পিস অজ পাড়াগাঁ এখনও আছে, যেখানে পার্টি বাজি ঢোকেনি, পলিউশন ও ঢোকেনি। সেখানে গাছে গাছে
পাখী ডাকে, রাত্রে প্রহরে প্রহরে শেয়ালের হুক্কাহুয়া শোনা যায়।নদীর ঘাটে মেয়েরা
কাপড় কাচে, বাচ্ছারা হুটপাটি করে সাঁতার কাটে।খোলা মাঠে রাখাল বালকেরা গরু চরায়।
পালতোলা নৌকার দল মাঝ নদীতে ভেসে বেড়ায়,মাঝিরা বেসুরো গলায় ভাটিয়ালি গায়। আকাশে
মেঘের বুকে চিল শকুন পাক খেয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝ রাতের তারা ভরা আকাশের বুক চিরে
ধূমকেতু আর ঊল্কারা ছুটে এসে মিলিয়ে যায়”।মহাদেব হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল-“ ওরে থাম থাম আর বলিসনি, আমার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি সেখানে গিয়ে নদীর জলে
ঝাঁপিয়ে পড়ি, চাঁদনী রাতে নদীর পাড়ে একা একা ঘুরে বেড়াই”। কোন থেকে কে একজন বলে উঠল–“চেপে যা বাপ।ঠাণ্ডা লাগিয়ে নিমনিয়া
বাঁধিয়ে বাড়ি ফিরলে, ছেলে বৌ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠীয়ে দেবে। আর নদীর পাড়ে সাপে কাটলে, বাড়ীও ফেরা হবে না”। অলোক বসু আক্ষেপের সুরে বললেন-“সত্যি জীবনটা ভয়ে ভয়েই কাটল। ছোট বেলাটা কেটেছে গুরুজনেদের
শাসনে, এখন কাটছে লঘু জনেদের ভয়ে”। কোনের টিপ্পনীঃ-“মাঝে আপিসের বসকে আর বাড়িতে বৌ কে ভয়ের
কথাটা চেপে গেলি কেন রে পাগলা”?অলোক
টিপ্পনী কে পাত্তা না দিয়ে বলে চলল –“তবে জায়গাটা কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে।কলকাতা
থেকে কত দূর? আর যাওয়াই বা হবে কিভাবে”?
মণিময় বললে –“
কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, তবে জায়গাটা বন্যা প্রবণ অঞ্চল বলে শীতকাল ছাড়া যাওয়া
ঠিক হবেনা”।কোনের টিপ্পনী –“ওই
দেখ, গাছে তুলে এবার মই কেড়ে নিচ্ছে।বন্যা দিয়ে শুরু করল। কি দিয়ে থামে দেখ”? মণিময় বললে–“হ্যাঁ আরও কয়েকটা
অসুবিধের কথা জেনে নিয়ে তারপর তোমরা ঠিক কর যাবে কিনা”। ভোলা বললে-“হ্যাঁ হ্যাঁ সেই
ভাল, আগের থেকে অসুবিধার কথা গুল জানা থাকলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে”।মণিময়
বললে“একেতো সেখানে কারেন্ট নেই।তারপর পীচের রাস্তা, স্কুল কলেজ্, হাসপাতাল
ডাক্তারখানা, ওষুধের দোকান, বাজার হাট, শপিং মল, হোটেল রেস্তুরেন্ট, মায় গাড়ী ঘোড়া
এসব কিছুই নেই”। কোনের প্রতিবাদীরা একসঙ্গে হৈ চৈ করে উঠল –“ এ হতেই পারেনা।সারা পৃথিবীতে এমন
কোন জায়গা নেই যেখানে ওসব নেই।মণিটা ছোট থেকেই গুলবাজ। এখনও ওর স্বভাব বদলায়নি।
প্রথমে গাছে তুলল, তারপর মই কেড়ে নিচ্ছে, আর সমানে বসে বসে গুল ঝেড়ে যাচ্ছে”।
মণিময় রাগত
স্বরে বললেন-“ দেখ তোরা আমার ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব বলে কিছু বলছি না।তবে আমার কথা
গুল না ভুল না ফুল তা সেখানে গেলেই বুঝবি।আর এটাও ভেবে দেখ, ওসব নেই বলেই গ্রামটা
পলিউশন ফ্রী।তবে তোদের মতো পলিউটেডরা
গেলেই সেখানকার পরিবেশ দূষিত হবে।তাই তোদের না যাওয়াই ভাল”।
অবিনাশ
বললেন-“ আহা আহা তুই অত রেগে যাচ্ছিস কেন?তবে সেখানে যদি থাকা খাওয়ার জায়গা ই না থাকে,
তবে আমরা গিয়ে থাকব কোথায় আর খাব ই বা কী”?
মহাদেব
বললেন-“ ঠিকিই ত, রেস্টুরেন্ট না হয় নেই, তা অনেক গ্রামেই থাকেনা। তাই বলে দোকান
বাজার নেই? এটা কিরকম কথা? বলি সে গ্রামে
কী মনুষ্য বসতি নেই? যদি থাকে তাহলে তারা খায় কী”?
-“সকলেরই
বাড়িতে চাষআবাদ আছে,খালে বিলে নদীতে পুকুরে ছোট বড় মাছ আছে, গাছে ফল পাকুড় ও আছে
বাড়িতে গাই গরু আছে।খাওয়া নিয়ে ওদের কোন ভাবনা চিন্তা নেই।চিন্তা শুধু একটা। দু পাঁচ বছর অন্তর নদীতে বন্যা”।
কোনের একজন
প্রতিবাদ করে উঠল –“ এটা কিন্তু মানতে পারছি না।স্কুল কলেজ নেই তো নেই, কিন্তু
ডাক্তারখানা, ওষুধের দোকান, এসব নেই কেন? গাঁয়ের লোকের কি কখনও অসুখ বিসুখ করেনা”?
-“ সাধারণত
করে না। ওরা খেটে খায়। তাই এমনিতে ওদের শরীর স্বাস্থ্য বেশ ভালই।তবে সেরকম বড় সড় কিছু হলে তখন শহরে যায়।আরও বড় কিছু হ’লে মরে যায়। কিন্তু ওষুধ খেয়ে আধ মরা হয়ে
বেঁচে থাকে না”।
অলোক বললে –“
যাকগে যাক সে সব কথা।এখন মোদ্দা কথাটা বলতো, সেখানে গেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
কোথায় হবে”?
মণিময় বললে –“থাকার
কোন অসুবিধে নেই, মামাদের সেখানে বিশাল অট্টালিকা এমনিই পড়ে রয়েছে।কেউ থাকে না। আমরা
গেলে তাঁরা খুশিই হবেন।তবে বাজার হাট,খাবার ব্যবস্থা এখান থেকেই করে নিয়ে যেতে
হবে।ওখানে কিছু জুটবে না”।
কোনের টিপ্পনী
–“বলি রাঁধবে কে? সঙ্গে একজন রাঁধুনিও তো নিতে হবে”।
একজন বলল –“আমার
সন্ধানে একজন ভাল কুক আছে।আগে সে পিজি তে রান্না করত”।
-“কোন পিজি?
পিজি হসপিটাল”?
-“হ্যাঁ।
-“বেড়াতে গিয়ে
আমরা কি রুগীর পথ্য খাব নাকি”? চেঁচিয়ে উঠলেন অবিনাশ বাবু।
-“ অত
চেঁচাসনি অবিনাশ, তোর না হার্টের ব্যামো? তোদের মতো রুগীদের জন্য তো হাসপাতালের
রাঁধুনিই ভাল। একজন খাবেন
নুন ছাড়া, একজন চিনি, একজন তেল মশলা ছাড়া”।
-“ আহা সে তো
বাড়িতে খেতে হয়।তাই বলে বেড়াতে গিয়েও কি ওই সব খাব নাকি”?বললেন মহাদেব।
কোনের
টিপ্পনীঃ “ঠিক, সেই জন্যই তো বেড়াতে যাওয়া।ফ্যামিলি কে লুকীয়ে কদিন ভালমন্দ খেয়ে আসা।
বছর বছর বিয়ের সিজিনে আর বেড়াতে গিয়ে বাঙালী
যা গেলে, তাতে সম্বৎসরের ডায়েটিংটা ভোগে
যায়। তখন স্বাস্থ্যের কথা কারো মনে থাকেনা, নাকের তলা দিয়ে দিব্বি ফিশ ফ্রাই,
রেড মীট, বিরিয়ানি আর রসগোল্লা পানতুয়া গলে যায়”।
নীলাদ্রী শেখর
গম্ভীর গলায় প্রতিবাদ করলেন-“ আমি গুরু মন্ত্রে দীক্ষিত। পাঁঠার মাংস খাই না”।
কোনের
টিপ্পনীঃ –“শুধু পাঁঠার মাংস ই নয়, তুই পাকা পোনা, গলদা চিংড়ি, ইলিশ মাছ, পেঁয়াজ রসুন এসবও
তো খাস না।আজীবন গ্যাদাল পাতা দিয়ে চারা
পোনার ঝোল খেয়েছিস। গুরু মন্ত্রটা অজুহাত। আসলে পেটে সয় না। মজবুরি কা নাম মহাত্মা গান্ধী”।
আর একজন বললে –“ঠিক
তাই, আমাদের এখানে আর একজন আছেন যিনি বড় মদের দোকানের ক্যাশিয়ার ছিলেন। কিন্তু কোন
দিন মদ ছোঁন নি বলে চরিত্রের গর্ব করে বেড়ান। যার পেটে কাঁচা জল
সহ্য হয়না সে কি করে মদ খাবে? তা ছাড়া সে কোন দিন ঘুষও খায়নি একই
কারনে। হজম হবেনা বলে”।
মণিময়- “এ সব বাজে কথা ছাড়, সেখানে যদি যেতে চাও তো তাড়াতাড়ি ঠিক করে
জানাও।মামাদের জানাতে হবে”।
এরপর
বিদ্যাল্যের প্রৌঢ় বন্ধু বান্ধবের দল কিভাবে নদীর ধারের সেই ছোট্ট গ্রাম খানিতে
গিয়ে হাজির হলেন, সেই যাত্রা পথের বর্ণনা দিয়ে অহেতুক আপনাদের মূল্যবান সময়ের অপচয়
করব না।শুধু সেখানে পৌঁছনর পরে একটি উল্লেখ
যোগ্য ঘটনার কথা বলে আমার লেখা শেষ করব।
মাছ মাংস ডিম
ও চাল ডাল ছাড়া অন্য আর সব কিছুই তাঁরা সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ছিলেন, তবু সকালে চা
বানাতে গিয়ে দেখা গেল যে দুধ আনা হয়নি।
আবিনাশ সেন
মহাশয় বললেন –“ কুছ পরোয়া নেই, গ্রামে যখন ঘরে ঘরে গরু আছে, একটু খুঁজলেই দুধ ও
পাওয়া যাবে”।এরপর তিন চারজনের একটা দল
দুধের খোঁজে গ্রামের পথে বেরিয়ে পড়লেন।কিন্তু কাজটা যতটা সহজ ভাবা গিয়েছিল, কর্জ ক্ষেত্রে
দেখা গেল তার থেকে ঢের শক্ত।বেশীর ভাগ বাড়িতেই গরু নেই।যাদের আছে, তা ভোর বেলা মাঠে চরতে চলে গেছে। অবশেষে দেখা গেল পথের
ধারে একটা মাটির বাড়ির গায়ে, একটা ছোট গরু বাঁধা অবস্থায় নিবিষ্ট মনে মাথা নিচু করে খড় খাচ্ছে।গরু দেখেই
শহুরে বাবুরা আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলেন –“ঐ যে গরু ঐ যে গরু। এ গরু কার? একটু দুধ পাওয়া যাবে কি”?
বাড়ির ভিতর
থেকে আল্প বয়সী একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে বললে –“দুধ নেই। একটু আগে ব্যাপারীরা
নিয়ে গেছে”।
গরুটার দিকে
আঙুল দেখিয়ে মহাদেব বললে –“ কেন নেই?এই তো গরু রয়েছে তবে দুধ নেই কেন”?
খুকী খুব অবাক
হয়ে বললে –“ওটা তো এঁড়ে বাছুর”?
ভোলা সুর নরম
করে বললে-“এঁড়ে হোক বা গেঁড়ে, গরু তো বটে।দেখ না যদি চায়ের জন্যে এক বাটি হয়”?
তরুণ কুমার
বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮ই বৈশাখ ১৮২৩