সঠিক কোন ঠিকানা না থাকায়
ভোটার লিস্টে ওদের নাম ওঠেনি।তবে তাতে ওদের কোন হেলদোল নেই।গণতন্ত্রের থেকে দলতন্ত্রেই ওরা বেশী
বিশ্বাসী।বংশ পরম্পরায় এ পাড়ার বাসিন্দা হলেও ওরা যে এপাড়ারই কেউ, লোকে সেটা ভাবে না।তাতে অবশ্য ওদের কিছু যায় আসে না।ওরা ওদের মতো থাকে। খুঁচির মা ওদেরেই একজন। এ পাড়ারই কোন পথের
ধারে তার জন্ম হয়েছিল।তারপর বড় হতে সে বাবুই বাসা বাড়ির এক তলায় প্লুটো ও খুঁচি
নামে দুটি সন্তানের জন্ম দেয়।তারা দুজনেই ইহলোকের মায়া কাটিয়ে বর্তমানে স্বর্গে
বসবাস করছে।এদের সাধারণত নাম করণ বিশেষ একটা হয়না, তবু প্লুটো ও খুঁচির নাম করণ
হয়েছিল। কে করেছিল সে বিষয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিরোধ আছে।পণ্ডিতদের নিয়ে ওই এক
সমস্যা। মতবিরোধ কিছুতেই সহজে যায় না।তবে মারা গেলেও খুঁচি তার মাকে একটা ভাল নাম
দিয়ে গেছে ‘খুঁচির মা’।পাড়ার লোকেরা বিশেষ করে ওই মৈনাক বাড়ির মেয়েটা বিসকুট
খাওয়ানর সময় ওকে ওই নামেই ডাকে।খুঁচির মায়ের একটা মস্ত গুন যে ওদের দলের অন্যদের
মতো ও ঝোগড়ুটে নয়।দু দুটো সন্তান আর স্বামীকে হারিয়ে বেচারি একদম মনমরা হয়ে গেছে।ও
চেষ্টা করে কারো সাতে পাঁচে না থাকতে, সব সময় ভদ্র ব্যবহার করতে।কিন্তু তুমি নিজে ভাল থাকলে কি হবে? আন্যেরা কি আর ভাল থাকতে দেবে?ওই তো পাশের
গলির উজ্জ্বল সংঘ থেকে ল্যেংড়ী আর কেলোর দল ওকে মৈনাক বাড়ির ফুটপাথ থেকে উৎখাত করে ছেড়েছে। কী আর করে বেচারি এখন গলির মোড়ের নব নির্মীয়মাণ
ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদেই ঘুরে
বেড়ায়। কখনও বা পরিত্যক্ত একটা পুরন রিক্সার সিটে
লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে। তরুণ কুমার
ওদের সম্পর্কে
পাড়ার অনেকের অনেক আভিযোগ,রাত্রে ওদের চিৎকারে আর গালাগালির শব্দে লোকে ঘুমুতে পারে
না। রাস্তার যেখানে সেখানে
ওদের ছেলে মেয়েরা পটি করে রাখে।ওরা জন্ম ভিখারীর দল।খাবারের লোভে লোকের পিছু পিছু
হেঁটে যায়।কিন্তু ওদের চরিত্রে ও এমন ভাল অনেক কিছু আছে যা আনেক ভদ্র লোকের
নেই।খাবার ছাড়া আর অন্য কিছু ওরা চায়
না।টাকা পয়সা কোনদিন ছুঁয়েও দেখে না।লোকের বাড়ির এঁটোকাঁটা উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করেই
ওরা জীবন ধারন করে।তবু সময় মতো তা না পেলে কক্ষনো রাগ দেখায় না।বা জোর করে কেড়েও
নেয় না।খালি পেটে বাজারের মধ্যে শুয়ে থাকে।কিন্তু কক্ষনো খাবারের
উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে না।পাড়ার লোকে ওদের দেখতে পারে না।তবু রাত্রে বুক দিয়ে পাড়াকে ওরা
পাহারা দেয়।রাত্রে নিজেদের মধ্যে কখনও কখনও ঝগড়া বিবাদ মারা মারি চিল্লাচিল্লি করে
বটে তবে সেটা নেহাতই শিক্ষার দোষ। ওরা চোর নয়। চোর ধরার নাম করেও কখনো চুরি করে না।বেড়ালেরা গৃহস্থের বাড়ি চুরি করে
দুধটা মাছটা খায় বলে তাদের উপর ওদের খুব রাগ।দেখলেই তেড়ে যায়।আর দেখতে পারে না
ময়লা জামাকাপড় পরা ঝোলা কাঁধে লোকেদের।ওদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চলন্ত গাড়ি বা মোটর
বাইক তাড়া করে।তবে ওদের সব থেকে বেশী রাগ হয় যখন কেউ ওদের নেড়ী বলে গাল দেয়।
ওরা আর কেউ নয়
এই শহরেরই বাসিন্দা, ক্যালকেশিয়ানের দল।
তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
পয়লা বৈশাখ ১৪২২ সন