বুদ্ধি
অনেক বছর আগে বাঙালীর যে সময় সুদিন ছিল, তখন ভারতের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের
কর্ণধার ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ প্রায় সকলেই ছিলেন বাঙালী। সেই সময় এক দিন সন্ধ্যায় একজন মধ্যবিত্ত বাঙালী, রায় বাবু হাওড়া থেকে দিল্লী গামী একটা রেলের ইন্টার ক্লাস কামরায় চাপলেন। তখনকার দিনের মানুষ এখনকার মতো এতো হুট হাট হিল্লি দিল্লী
করে বেড়াত না।ফলে কামরাটা একরকম ফাঁকাই ছিল। বাঙালী ভদ্রলোকের সঙ্গে সেই কামরায় উঠলেন একজন অবাঙালী ভদ্রলোক, মিঃসিং।তিনি ও দিল্লী যাচ্ছেন। ট্রেন ছাড়ার কিছু পরে, রাত্রে শুয়ে পড়ার আগে, দুজনে যে যার টিফিন বাক্স খুলে খাবার
সাজিয়ে খেতে বসলেন। মিঃ সিং বের করলেন খাঁটি ঘীয়ে ভাজা পরোটা আর কষা মাংস।
সঙ্গে রায়তা আর স্যালারড।রায় বাবু বের করলেন বাঙলা খাবার ডাল ভাত লাউচিংড়ী আর পুঁটী মাছ ভাজা।কিন্তু মিঃ সিং এর খাবারের গন্ধে
রায় বাবুর জিভে
জল এসে গেল। দুজনে মুখোমুখি বসে খাওয়া শুরু করতে যাবেন, এমন সময় মিঃ সিং বলে
বসলেন- “দাদা একঠো বাত পুঁছু? আপ লোগ মেহনৎ করতা , হাম লোগ ভী মেহনৎ করতা হ্যায়।মগর আপ লোগ জিতনা উপর পৌঁচতা, হাম লোগোঁ সে উও কিঁউ নেহি হোতা” ? রায়
বাবু গম্ভীর ভাবে জবাব দিলেন-“ তুম লোগকা
বুদ্ধি কম হ্যায় ইসিলিয়ে”। মিঃ সিং অবাক হয়ে জানতে চাইলেন-“ বুদ্ধি ক্যায়া হোতা হ্যায় ?আউর কাঁহা পর
মিলতা”?
রায় বাবু পুঁটী মাছ দেখিয়ে বললেন- “হিঁয়া। এই মছলি খানে সে সেই বুদ্ধি হোতা”। মিঃ সিং ভক্তিতে গদগদ হয়ে হাত জোড় করে বললে-“দাদা আপকা
ইয়ে বুদ্ধিওয়ালা খানা হামকো দিজিয়ে, আউর হামারা খানা আপ লিজিয়ে”।প্রস্তাবটা শুনে রায় বাবুর আনন্দ হলেও গম্ভীরসে বললেন-“নেহী নেহী উহ ক্যাসে
হোগা? হামারা বুদ্ধি কম হো যায়গা না”? –“ আরে আপ তো বচপন সে ইয়ে বুদ্ধি খাতা হ্যায়, এক
দিন নেহি খানেসে কুছ কম নেহি হোগা”।রায় বাবু নিমরাজি ভাব দেখিয়ে নিজের খাবারটা তাকে দিয়ে দিল। আর তার খাবার টা নিয়ে তরিবৎ করে খেল। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিঃ সিং এর মনে হো্ল, কাল রাত্রে এই বাঙালী লোকটা কি সব বুদ্ধি সুদ্ধির নাম করে তাকে
একটা অখাদ্য খাবার খাইয়ে তার ভাল খাবারটা খেয়ে নিয়ে খুব ঠকিয়েছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললে-“দাদা
ইয়ে কাম মগর আপ আচ্ছা নাহি কিয়া”।
-“ কোন সা কাম”? জানতে
চাইল রায় বাবু।
-“ইএই যো আপ
কাল ক্যায়া সব বুদ্ধি সুদ্ধি বোলকে হামারা আচ্ছা কিমতি বালা খানা খা লিয়া, অউর
হামকো পুঁটী মাছ খিলায়া”।
রায় বাবু
গম্ভীর ভাবে বললেন যে “ ইয়ে বুদ্ধি কাল তুমারা কাঁহা থা? অউর আভী আজ কাঁহাসে আয়া”?
তরুণ কুমার
বন্দ্যোপাধ্যায়
(ভিক্ষা / এঁড়ে তক্ক/ মোহর পড়ুন)
(ভিক্ষা / এঁড়ে তক্ক/ মোহর পড়ুন)
No comments:
Post a Comment