Wednesday, 2 December 2015

             বসন্তের কোকিল
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেচারাম মণ্ডলের (আসল নাম নয়), প্রথম কাজ হল আজকের খরচ চালানর মতো টাকা জোগাড় করা।বাবা মারা যাওয়া ইস্তক এটাই তার দৈনিক প্রধান কাজ।কিন্তু মুশকিল হল যে আগেকার মতো আজকাল আর ধার দেনা টেনা  তেমন পাওয়া যায়না। মানে কেউ আর দেয় টেয় না। তার উপর  বাড়ীতেও তেমন বিক্রি করার মতো  ভাল জিনিষ পত্র কিছু আর  বিশেষ অবশিষ্ট নেই।আজকাল সকাল  বিকেলটা তার মুড়ি চিবিয়েই কাটে, তাই থালা বাসন গুলো সে আগেই বিক্রি করে দিয়েছে।বাকী ছিল হাঁড়ী কড়াই গুলো, সেগুলোও মায় এমনকি উনুনটা ক’দিন আগে বিক্রি হয়ে গেছে অথচ তাদের কিন্তু একদিন অবস্থা ভালই ছিল। তার বাবা কেনারাম  মণ্ডল(আসল নাম নয়), তেজারতি ব্যবসা করে অগাধ বিষয় সম্পত্তি করে ছিলেন। তাঁর সময়ে গাঁয়ে ইস্কুল না থাকায় তিনি পাঠশালার বেশি পড়তে পারেননি।কিন্তু সেই সামান্য বিদ্যে নিয়ে বুদ্ধির জোরে ব্যবসা চালিয়ে তিনি অগাধ বিষয় সম্পত্তি করেছিলেন।পরে গাঁয়ে ইস্কুল হওয়ায় তিনি বেচারামকে সেখানে ভর্তি করে দিয়ে নিশ্চিন্তে  ছিলেন। ভেবেছিলেন ছেলেটি তাঁর বিদ্বান হবে। অথচ ছেলে যে তার শুধু মিড ডে মিলের লোভেই ইস্কুলে যায়, আর ইস্কুলের মাস্টাররাও সেখানে সারাদিন শুধু সে সব নিয়েই ব্যস্ত থাকে, খবর তাঁর জানা ছিল না।এদিকে পাস ফেল না থাকায়, ছেলে বছরের পর বছর ক্লাসে উঠে গেছে এবং যথা সময়ে প্রাকৃতিক নিয়মে ও হল কালেকশনের জোরে সে মাধ্যমিকটাও পাস করে ফেলেছে। এদিকে নিজের নাম ও  শুদ্ধ করে লিখতে পারেনা।সাধারন যোগ বিয়োগ করতে পারেনা মা তো তার আগেই মারা গিয়ে ছিলেন, এবার ক’দিনের জ্বরে হঠা বাবা মারা যেতে সে বেচারা অকূল পাথারে পড়ল হিসেব নিকেশ না বোঝায় ক’দিনের মধ্যেই তার ব্যবসা লাটে উঠল। ইয়ার বক্সির দল তাকে সাহায্য করার নামে খারাপ রাস্তায় নিয়ে গিয়ে, বদ অভ্যাস ধরিয়ে ঠকিয়ে সর্বস্বান্ত করে দিল। হাজার হোক সে একজন দস্তুর মতো লেখা পড়া জানা? মাধ্যমিক পাশ ছেলে তো বটে, কি করে আর লাঙ্গোল ঠেলে? কি করেই বা সে কোদাল কোপায়? চাকরির চেষ্টা যে সে করেনি তা নয়, তবে কেউ তাকে রাখেনি। এদিকে দিন দিন তার অবস্থা পড়ে যাচ্ছে। এতদিন তবু যাহোক করে চলছিল, আজ আর ঘরে বেচার মতো কিছুই নেই। সেই শ্রাবণ মাস যেতেই সে তার ছাতাটা বেচে দিয়ে ছিল।আর তারপর থেকে সে অপেক্ষা করে আছে যে কবে শীতটা যাবে? তখন সে তার শালটা বেচবে।এদিকে শালা শীতের যাবার কোন নামই নেই।হ ঠা সে শুনল। স্বকর্ণে পরিষ্কার শুনল। এবং একবার দুবার নয় পর পর বেশ কয়েক বার শুনল সুমিষ্ট মনোমুগ্ধকর কুহু  কুহু ডাক।এ ডাক ভুল হবার নয়।এ পরিষ্কার কোকিলের ডাক।সুতরাং “বসন্ত এসে গেছে”।জীবনে এত আনন্দ আগে সে কোনদিন পায়নি। এত জোরে লাফিয়ে উঠল যে আর একটু হলে মাথাটা ঘরের ছাদে ঠুকে যেত। দৌড়ে গিয়ে ক্যালেন্ডার দেখল, ঠিক, যা ভেবেছে তাই ঠিক।আজ পয়লা ফাগুন। অর্থাশীত কাল চলে গেছে। এবার নিশ্চিন্তে শালার শালটাকে  বেচে, অনেক দিন  পরে য়ার বক্সিদের নিয়ে  আশ  মিটিয়ে খানাপিনা করতে হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে দরজায় তালা লাগানর সময় সে একটু ভাবল, “তালাটা লাগানর কোন দরকার আছে কি? মানে চুরি যাবার মতো কিছুই তো আর অবশিষ্ট নেই। যাকে কথায় বলে “ন্যাংটার নেই বাটপাড়ের ভয়”। তবু  লাগানই  থাক। বলা তো  যায় না শেষে  তালাটাই যদি চুরি যায়”? ভবিষ্যতে  সেটাও তো একদিন বেচতে  হবে। শালটা বেচে যা পাবে বলে ভেবেছিল, পেল তার থেকে অনেক কম। তবু খানাপিনা ভালই হল। কিন্তু  রাত্রে বাড়ি ফেরার সময় শ্ত্রুর মুখে  ছাই দিয়ে অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টি নামল। আর তার হাত ধরাধরি করে জাঁকিয়ে  পড়ল ঠাণ্ডা। বাড়ির কাছাকাছি আসতে কি যেন একটা  তার পায়ে ঠেকল। নীচু হয়ে দেখল যে সেই কোকিলের ছানাটা মরে পড়ে  আছে।  
ভিজে শরীরে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একটা দুঃখের হাসি হেসে সে বললে  -  “ ভাই কোকিল তুমি নিজে মরলে সঙ্গে আমাকেও মারলে”। 


তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

২৭/১১/২০১৫                                            


Saturday, 14 November 2015

যোটক বিচার

           অষ্টকূট যোটক বিচার প্রসঙ্গে
.....................................................................।।
জ্যোতিষশাস্ত্রালোচনায় দেখা যায় যে খ্রীষ্টীয় দশম শতাব্দী পর্যন্ত বিবাহে নাড়ীনক্ষত্র কূট বিচার বা অষ্টকূট যোটক বিচার ছিলনা। (এই বিষয়ে শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় শ্রী হরিচরণ স্মৃতিতীর্থ বিদ্যারত্ন মহাশয় তাঁর বিবাহ-মিলন- বিষয়ক “ সুখের সন্ধান” পুস্তকে কিছু আলোচনা  করেছেন)।খ্রীষ্টীয় নবম শতাব্দী  থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন অবস্থায় ভারতীয় জনচিত্ত কর্ম বিমুখ ও ক্রিয়াশূন্য হয়ে পড়েছিল।সম্ভবতঃ ওই সময়ে অন্যান্য নানান রকম প্রবাদবাক্য ও  কুসংস্কারের সঙ্গে এই তথাকথিত বিবাহ মিলন বা যোটক বিচার পদ্ধতিটা জন মানসে অবস্য কর্তব্য হিসাবে প্রবেশ লাভ করে এবং কতিপয় সুচতুর ব্রাহ্মণ পণ্ডিত এ যুগের ন্যায় সে যুগেও লোক ঠকান জ্যোতিষ ব্যবসা ফেঁদে বসেন ও সকল প্রকার সামাজিক ক্রিয়া কর্ম কে নিয়ন্ত্রন করার জন্য নানান রকম ফন্দী ফিকির, তাবিজ কবজ ও কুসংস্কারের আশ্রয় নেন।    
জন্ম সময়ের গ্রহসংস্থান থেকে মানুষের ভাগ্যফলের বিচারের তুলনায় নাড়ীনক্ষত্র ঘটিত অষ্টকূট বিবাহ মিলন বিচারের কোন যুক্তিসঙ্গত গুরুত্ব থাকে না।গণ-মিলনে-নর-রাক্ষস থেকে দম্পতির অকালমৃত্যুর কোন ন্যায়সঙ্গত যুক্তি পাওয়া যায়না। কারন জন্মনক্ষত্রের উগ্র-চরাদি গণ থেকে নর-রাক্ষসাদির  প্রকৃতি বিচার করা হয়।এই গণনা ভাগ্যফলের বিচারের তুলনায়  স্থুল। কিন্তু লৌকিক বিচারে একটা আতঙ্কের কারন সৃষ্ট হয়ে বহুদিন ধরে চলে আসছে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে পাত্রপাত্রীর পরস্পরের রাশির  মিলের অভাবে বড় জোর মনের বা মতের অনৈক্য ঘটতে পারে, কিন্তু দোষযুক্ত চন্দ্রে দম্পতির অমঙ্গলের কারন যুক্তিসঙ্গত ভাবে পাওয়া যায় না।কারন জ্যোতিষশাস্ত্র মতে চন্দ্র যুক্ত রাশি থেকে আয়ু এবং ভাগ্য বিচার করলে লগ্ন ভিত্তিক বিচারের কোন গুরুত্ব থাকে না।অথচ ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র প্রধানত লগ্ন ভিত্তিক গণনার উপরই নির্ভরশীল।
চন্দ্র সওয়া দুই দিন প্রত্যেক রাশিতে থাকে;পক্ষান্তরে লগ্ন প্রত্যেক দুই ঘণ্টা অন্তর পরিবর্তিত হয়।এই অবস্থায় চন্দ্র থেকে ভাগ্য গণনা এবং অকালমৃত্যু প্রভৃতি অমঙ্গল বিচার করলে, সওয়া দুই দিন পর্যন্ত যত পুরুষ বা স্ত্রীলোক জন্মাবে, তাদের একটা কুষ্ঠী দিয়ে যাবতীয় ভাগ্যফল ও স্ত্রী বা স্বামী হানির বিচার করা যাবে। তা কিন্তু কোনভাবেই সম্ভবপর নয়।
১০০২ খ্রীষ্টাব্দে  মালবের ধারা নগরীতে ভোজরাজের সভায় স্মৃতির পণ্ডিতগণ প্রথমে অষ্টকূট  বিচারের গণনা ‘রাজমার্তণ্ড’ নামক জ্যোতিষসংহিতায় প্রবর্তন করেন।তারপর আচার্যগণ ক্রমশঃ নক্ষত্রঘটিত যাবতীয় ফল বিবাহ-মিলনের বিচারে প্রবর্তন করেন।শ্রীনিবাস শাস্ত্রীর ‘শুদ্ধিদীপিকা’, রামদৈবজ্ঞের ‘দৈবজ্ঞ- মনোহর ও ‘মুহূর্তচিন্তামণি’ প্রভৃতি পুস্তকে এবং খ্রীষ্টীয় ১৫শ শতাব্দীতে বঙ্গদেশের রঘুনন্দনের ‘জ্যোতিষতত্বে’ এই অষ্টকূট-বিচার স্থান পায়।এইভাবে ক্রমশঃ প্রসারলাভ করে পঞ্জিকার জ্যোতিষ বচনারথে স্থান পেয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
মানব জীবনের উপর জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রভাব সম্পর্কিত শাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র নামে পরিচিত। জ্যোতিষশাস্ত্রে মেষ, বৃষ, মিথুন, ইত্যাদি বারোটি রাশি, নয়টি গ্রহ, ও সাতাশটি নক্ষত্র এবং লগ্ন ভিত্তিক অসংখ্য যোগের ও সূত্রের সাহায্যে মানুষের ভূত ভবিষ্য বলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।   
আশুন এবারে দেখা যাক যোটক বিচার বলতে ঠিক কি বুঝায়?
বিবাহের পূর্বে বর ও কন্যার পরস্পরের জন্মরাশি, জন্মনক্ষত্র ও রাশ্যাধিপ গ্রহদি থেকে, যে শুভাশুভ ফল বিচার করা যায়, তাকেই যোটক বিচার বলে। যোটক বিচার অষ্টপ্রকারে বিভক্ত।
বর্ণকূট, বশ্যকূট, তারাকূট, যোনিকূট, গ্রহমৈত্রীকূট, গণমৈত্রীকূট, ও ত্রিনাড়ীকূট। বর ও কন্যার পরস্পরের বর্ণের একতা বা মিত্রতা হলে এক গুন ফল, তার সঙ্গে বশ্যতা যোগ হলে দ্বিগুণ ফল, তারাশুদ্ধি যোগে ত্রিগুন ফল, এইভাবে অষ্টপ্রকারে শুভ হলে  দম্পতীর পূর্ণ শুভ ফল ভাবা হয়।
এবার দেখা যাক বর্ণ কাকে বলে বা বর্ণ বলতে ঠিক কি বুঝায়-। জ্যোতিষশাস্ত্রে মেষ, বৃষ, মিথুন, ইত্যাদি যে বারোটি রাশি ব্যাবহার করা হয় তাদের বিপ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র বর্ণে  বিভক্ত করা হয়েছে।যথা যে ব্যক্তিগনের জন্ম কর্কট, মীন, বা বৃশ্চিক রাশিতে তাঁদের বর্ণ বিপ্র। এইভাবে যাঁদের জন্ম সিংহ, তুলা বা ধনু রাশিতে তাঁদের বর্ণ ক্ষত্রিয়। যোটক বিচারের নিয়মে শুদ্র বর্ণের থেকে বৈশ্য বর্ণ শ্রেষ্ঠ, বৈশ্য বর্ণের থেকে ক্ষত্রিয় বর্ণ শ্রেষ্ঠ, আবার ক্ষত্রিয় বর্ণের থেকে বিপ্র বর্ণ শ্রেষ্ঠ।
বর্ণ ফলমে বলা হয়েছে যে-
"ক্ষাত্র-বিট্-শুদ্র-বিপ্রাঃ স্যুঃ ক্রমান্মেষাদি-রাশয়ঃ।
তত্র বর্ণাধিকা কন্যা নৈবোদ্বাহ্যা কদাচন" ।।
অর্থাবরের বর্ণাপেক্ষা কন্যার বর্ণ শ্রেষ্ঠ হলে, সেই কন্যাকে কদাচ বিবাহ করিবেনা”। করলে কি হবে?
"বর্ণশ্রেষ্ঠা তু যা নারী বর্ণহীনস্তু যাঃ পুমান।
বিবাহং যদি কুরব্বীত তস্য ভর্তা বিনশ্যতি"।।
অর্থা “বর্ণশ্রেষ্ঠা কন্যাকে বিবাহ করিলে ভর্তার নিধনাশঙ্কা।
সেই কন্যা অতি মহকুল সম্ভূতা হইলেও পতিপরায়ণা হয় না”।
একে তো জন্ম চান্দ্র রাশিকে উপরিউক্ত চারটি গণে বিভাজন বিজ্ঞান না হোক প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্র সম্মতও নয়, তার উপর শুধু মাত্র গণে না মিলিয়ে বিয়ে দিলে, পুরুষের নিধনাশঙ্কা। এমন কথা কেবল মাত্র অবৈজ্ঞানিক এবং অবাস্তবই নয় হাস্যসকর ও বটে।  
বশ্যকূট্। “মিথুন, কন্যা, তুলা, কুম্ভ, ও ধনুর পূর্বা্রদ্ধ, যদি বরের রাশি হয় এবং মেষ, বৃষ, কর্কট, ইত্যাদি যদি কন্যার রাশি হয় সেই কন্যা বরের বশীভূত হয়”।
এই ভাবে কয়েকটি জন্ম চান্দ্র রাশিকে অন্য কয়েকটি জন্ম চান্দ্র রাশির বশ্য ধরা হয়ে্ছে। এবং বিপরীতে বিপরীত ফল বলা হয়েছে।
"এবং বশ্যসমাযোগে দম্পত্যোঃ প্রীতিরূত্তমা।
বশ্যাভাবেহপি দম্পত্যো্রবিবাহঃ কলহ-প্রদঃ"।।
অর্থাকথিত নিয়মে বর ও কন্যার রাশির বশ্যাবশ্য বিচারে যদি কন্যা বরের বশ্যা হয়, তবে শুভ ও পরস্পর প্রীতিলাভ হইয়া থাকে ; অন্যথায় কলহাদি হইয়া থাকে”।।
পৃথিবীকে ঘিরে চন্দ্র তার পরিক্রমায়, বারটি রাশির এক একটিতে সোয়া দু দিন অবস্থান করে। ঐ সময়ে যত লক্ষ্য মানুষ জন্মায় তাদের সকলেরই ঐ একই জন্মরাশি হয়। অথচ কোন এক রাশিতে জন্মান মানুষ অন্য আরেক দিনে জন্মান মানুষের বশ্য হবে। এবং বিবাহের পরও সেই হিসাবে বশ্যতা চলতে থাকবে ধরে নিয়ে বিবাহের ব্যবস্থা করতে হবে।আবার কন্যা  দিগকে বরের বশ্য হতেই হবে। অন্যথায় অনর্থ হবে।
মধ্যযুগীয় পুরুষ শাসিত সমাজের সমাজপতি গণের নিকট এর থেকে ভাল বিধান আর কীই বা আশা করা যায়?
কিন্তু পরম আশ্চর্যের ও পরিতাপের বিষয়, বর্তমান বিজ্ঞানের যুগেও বহু শিক্ষিত মানুষ এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন এবং এই সব তথাকথিত জ্যোতিষিক বচনের উপর নির্ভর করে নিজেদের সন্তান সন্ততি গণের বিবাহ স্থির করেন।
এবারে আসা যাক গণ কূটের কথায়। গন কূট কি? অমুকের অমুক গণ, দেব, নর না রাক্ষস? কি ভাবে জানা যাবে?
জ্যোতিষ গণনায় যে সাতাশটি নক্ষত্রকে ধরা হয়েছে, তাদেরই ঐ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বর ও কন্যার জন্মনক্ষত্র থেকে গণ কূট বিচার করতে হয়।
স্বাতী, হস্তা, অনুরাধা, অশ্বিনী, ইত্যাদি নয়টি সত্ত্ব গুন বিশিষ্ট নক্ষত্রে বা জন্মকালীন চন্দ্রাশ্রিত নক্ষত্রে জন্মিলে দেবগন ও সত্ত্ব গুণী হয়। পূর্বফল্গুনী, পূর্বাষাড়া, পূর্বভাদ্রপদ, ইত্যাদি নয়টি নক্ষত্রে বা জন্মকালীন চন্দ্রাশ্রিত নক্ষত্রে জন্মিলে নর গন হয়।
জ্যেষ্ঠা, মূলা, মঘা, ইত্যাদি নয়টি নক্ষত্রে বা জন্মকালীন চন্দ্রাশ্রিত নক্ষত্রে জন্মিলে রাক্ষস গণ হয়।এতো হল গণের পরিচয়। এবারে বিচারটা কিভাবে হবে?
“স্বজাতৌ পরমা প্রীতিরমধ্যা দেব-মানুষে।
দেবাসুরে বৈরতা চ ম্রিত্যুরমানুষ-রাক্ষসে।।
রাক্ষসী চ যদা কন্যা মানুশ্চ বরো ভবেত।
তদা ম্রিত্যুরন দূরস্থো নির্ধনত্বমথাপি যা” ।।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে মানুষের শিক্ষা দীক্ষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি,  জাতিগত বা বংশগত ভাবধারার কোন মূল্য নেই। স্বাতী, হস্তা, অনুরাধা, অশ্বিনী, ইত্যাদি নক্ষত্রে জন্মালেই তার মধ্যে সত্ত্বগুণ থাকবে এবং সে দেবতুল্য মানুষ হবে। একই ভাবে জ্যেষ্ঠা, মূলা, মঘা, ইত্যাদি  নক্ষত্রে জন্মালে, সেই কন্যা যতই সুশীলা হোকনা কেন, বিনা দোষে তার রাক্ষস গণ হবে।এবং তার মধ্যে তমমগুণ  থাকায় দেবগণের পাত্রের সঙ্গে তার কোন মতেই বিবাহ করা চলবে না। বিয়ে হলে কি হবে? ভাল হবেনা। কলহাদি অশান্তি হবে। আর নর- রাক্ষসের বিবাহে কি হবে?
“অসুর- মনুজয়োশ্চেন্মৃত্যুমেব প্রদিষটা"।।
নরগণের পাত্রের সঙ্গে রাক্ষস গণের কন্যার বিবাহ হলে পাত্রের মৃত্যু হবে। অরথা রাক্ষসী কন্যা নর পাত্রকে খেয়ে ফেলবে।  
শিক্ষিত মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে এটা কিভাবে ভাবতে পারে?
কুসংস্কারেরও কথাও একটা সীমা থাকা উচিৎ। বিনা কারনে শুধু  মাত্র কুসংস্কারের বশে প্রতিদিন কতো ভাল ভাল বিবাহের যোগ নষ্ট হচ্ছে। কথায় বলে- “পুরুষের ভাগ্যে জন ও নারীভাগ্যে   ধন”।তাই অনেক পাত্র পক্ষ আবার সুলক্ষণা ভাগ্যবতী পত্রীর খোঁজ করেন যাতে সেই পত্রীর ভাগ্যযোগে তার স্বামীর আর্থিক ও বৈষয়িক উন্নতি হয়। কিন্তু জ্যোতিষের দৃষ্টিতে এই সকল চিন্তা, এমনকি তাবিজ কবজ, গ্রহরত্নাদি ধারন করে ভাগ্য ফেরানর চেষ্টা ও অধিকাংশই অন্তঃসারশুন্য। পণ্ডিত বরাহ  বলেছেন যে “ মানব স্ব স্ব কর্মানুসারে সুখদুঃখ ফল ভোগ করিয়া থাকে। হিন্দু ষড়দর্শন ও বলে যে, ভাগ্য অর্থে মানবের কর্মফলভোগ বুঝায়।মানুষ যে সকল ভালোমন্দ কর্ম করিয়া থাকে তাহার ফলভোগ, এই জন্মে বা পরজন্মেই হউক, তাহাকে  ভোগ করিতেই হইবে”। এই দুই শাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চিন্তা করলে বোঝা যায় যে, কারো ভালমন্দ কর্মফল ভোগের জন্যে অন্য কেউ দায়ী হতে পারে না।ফলে যে যার কর্মফল ভোগ করে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে একই শাস্ত্রের দু দল পণ্ডিতের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই ধরনের মতবাদ প্রচলিত ছিল।এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ভাবে কিছু বলতে গেলে, বলা যায় যে ভাগ্য বলে সত্যই যদি কিছু থেকে থাকে তা অমোঘ। তাকে কেবল মাত্র বিবাহের দ্বারা বদলান যায় না।এবং এই ধরনের চেষ্টা শুধু মাত্র অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার পূরণই নয় সমাজের পক্ষে ক্ষতিকরও বটে।  

তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
১৪/১১/২০১৫
(লেখকের লেখা-ভৌম দোষ/ ছিন্ন মূল/  ভিক্ষা / এঁড়ে তক্ক / মোহর/বুদ্ধি পড়ুন ও comments এ  মতামত জানালে বাধিত থাকব )  
         
       
           

                  

Saturday, 7 November 2015

বুদ্ধি

               বুদ্ধি

 অনেক বছর আগে বাঙালীর যে সময় সুদিন ছিল, তখন ভারতের   প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ প্রায় সকলেই  ছিলেন বাঙালীসেই  সময় এক দিন সন্ধ্যায়  একজন মধ্যবিত্ত বাঙালী, রায় বাবু হাওড়া  থেকে দিল্লী গামী একটা রেলের ইন্টার  ক্লাস কামরায় চাপলেন। তখনকার দিনে মানুষ এখনকার মতো এতো হুট হাট হিল্লি দিল্লী করে বেড়াত না।ফলে কামরাটা একরকম ফাঁকাই  ছিল। বাঙালী ভদ্রলোকের সঙ্গে সেই  কামরায় উঠলেন একজন অবাঙালী ভদ্রলোক, মিঃসিংতিনি দিল্লী যাচ্ছেনট্রেন ছাড়ার কিছু পরে, রাত্রে  শুয়ে  পড়ার  আগে, দুজনে যে যার টিফিন বাক্স খুলে খাবার সাজিয়ে খেতে বসলেন। মিঃ সিং  বের  করলেন খাঁটি ঘীয়ে ভাজা পরোটা আর কষা মাংস। সঙ্গে রায়তা আর  স্যালারড।রায় বাবু বের করলেন বাঙলা খাবার ডাল ভাত লাউচিংড়ী আর পুঁটী মাছ ভাজা।কিন্তু মিঃ সিং এর খাবারের গন্ধে রায় বাবু  জিভে জল এসে গেল। দুজনে মুখোমুখি বসে খাওয়া শুরু করতে যাবেন, এমন সময় মিঃ সিং বলে বসলেন- “দাদা একঠো বাত পুঁছু?  আপ লোগ মেহনকরতা , হাম লোগ ভী মেহনকরতা হ্যায়।মগর আপ লোগ জিতনা উপর পৌঁচতাহাম লোগোঁ সে উও কিঁউ নেহি হোতা” ?  রায় বাবু  গম্ভীর ভাবে জবাব দিলেন-“ তুম লোগকা বুদ্ধি কম হ্যায় ইসিলিয়ে”। মিঃ সিং অবাক হয়ে জানতে চাইলেন-“ বুদ্ধি ক্যায়া হোতা হ্যায় ?আউর কাঁহা পর মিলতা”?   
 রায় বাবু পুঁটী মাছ  দেখিয়ে বললেন- “হিয়া। এই মছলি খানে সে সেই  বুদ্ধি হোতা”। মিঃ সিং  ভক্তিতে গদগদ হয়ে হাত জোড় করে বললে-“দাদা আপকা ইয়ে বুদ্ধিওয়ালা খানা হামকো দিজিয়ে, আউর   হামারা খানা আপ  লিজিয়ে”।প্রস্তাবটা শুনে রায় বাবু  আনন্দ হলেও  গম্ভীরসে বললেন-“নেহী নেহী উহ ক্যাসে হোগা? হামারা বুদ্ধি কম হো  যায়গা না”? –“ আরে আপ তো বচপন সে ইয়ে বুদ্ধি খাতা হ্যায়, এক দিন নেহি খানেসে কুছ কম নেহি হোগা”।রায় বাবু  নিমরাজি ভাব দেখিয়ে নিজের খাবারটা তাকে দিয়ে দিল। আর তার খাবার টা নিয়ে তরিবৎ করে খেল। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিঃ সিং এর মনে হো্ল, কাল রাত্রে এই  বাঙালী লোকটা কি সব বুদ্ধি সুদ্ধির নাম করে তাকে একটা অখাদ্য খাবার খাইয়ে তার ভাল খাবারটা খেয়ে নিয়ে খুব ঠকিয়েছেসে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললে-“দাদা ইয়ে কাম মগর আপ আচ্ছা নাহি কিয়া”।
-“ কোন সা কাম”? জানতে চাইল রায় বাবু।
-“ইএই যো আপ কাল ক্যায়া সব বুদ্ধি সুদ্ধি বোলকে হামারা আচ্ছা কিমতি বালা খানা খা লিয়া, অউর হামকো পুঁটী মাছ খিলায়া”।  
রায় বাবু গম্ভীর ভাবে বললেন যে “ ইয়ে বুদ্ধি কাল তুমারা কাঁহা থা? অউর আভী আজ কাঁহাসে আয়া”?


তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 
(ভিক্ষা / এঁড়ে তক্ক/ মোহর পড়ুন)             

Monday, 13 April 2015

ভুতের ছানা

                                        “ভূতের ছানা”
                     
আমি বর্ধমানের এক গ্রামের ছেলে।কলকাতায় এসেছি চাকরির সন্ধানে।সকাল থেকে সন্ধ্যা, টালা থেকে টালি গঞ্জ দৌড়ে বেড়াই কাজের খোঁজেকোথাও কিছু লাগছেনা লাগছেনা হঠা এক বন্ধু একজনের একটা ঠিকানা দিয়ে বলল-“ এনার সঙ্গে দেখা কর।ইনি নাম করা একজন আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন।এনার উঙ্গুলি হিলনে অনেক কিছুই হয়।দেশ বিদেশে ওনার অনেক নামডাক অনেক প্রতিপত্তি”।  
বললাম-“শেষে কিনা মাফিয়া ডন?তা চেনা নেই শোনা নেই, উনি পাত্তা দেবেন কেন আমাকে”?
সে বললে-  “গিয়েই দেখ না একবার”? ভাবলাম-“ পেটের দায় বলে কথা? দেখাই যাক”  
গুটি গুটি পায়ে একদিন ঠিকানা ধরে হাজির হলাম সেখানে গিয়ে।প্রথম দিন ও তার পরের তিন দিন শুধু বেল বাজানই সার হল।কেউ সাড়া দিল না।  বন্ধুকে বলতে, “সে বললে এরকমই হয়। উটকো লোককে ওরা হঠাৎ করে দরজা খুলে দেয় না।তুই লেগে থাক”।পঞ্চম দিনে চাকর বাকর গোছের একজন দরজা খুলে বসার ঘরে পৌঁছে দিয়েই চলে গেল।বসতেও বললে না।আমার কেমন যেন মনে হতে লাগল যে আমার উপর কেউ নজর রাখছেকোথাও লুকন ক্যামেরা থাকতে পারেখনিক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে থেকে, ঘরের কোনে রাখা একটা কাঠের টুলে বসলাম।সোফায় বসার সাহস হল না। অনেক্ষন বসে আছি তো বসেই আছি কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।হঠা লক্ষ করলাম যে দরজার পর্দাটা অল্প অল্প নড়ছে। তারপর ঘরে ঢুকল স্লিপিং স্যুট পরা বছর পাঁচেকের অসম্ভব রোগা একটা ছেলে। ছেলেটির হাবভাব চালচলন সবই অস্বাভাবিক ও অদ্ভুত। সে মাথাটা ডানদিকে সামান্য একটু হেলিয়ে, এক দৃষ্টে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে বললে আংকেল আংকেল  আমাকে একটা ভূতের ছানা এনে দেবে?
শুনে আমি  তিনবার খাবি খেলাম । অবাক হয়ে বললাম-“ভূতের ছানা? কি করবে তুমি তাকে দিয়ে”?
“তার সঙ্গে খেলব”  
“কেন মানুষের ছানারা তোমার সঙ্গে খেলেনা”?
 ছেলেটা আরও একটু আমার কাছে সরে এল । তারপর খুব একটা গোপন কথা বলার মতো করে আসতে আসতে  বললে- আসলে আমি তো অসুস্থ্, ওদের সঙ্গে ছুটতে পারিনা, তাই ওরা আমায় খেলা  নেয় না
ভারি বিপদে পড়ে গেলাম আমিআশা ছিল চাকরি বাকরি একটা কিছু হয়ে যাবে কিন্তু শেষে যে এ রকম ভূতের ছানার পাল্লায় পড়তে হবে তা কে জানত? তবে ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়।অনেক দিন থেকেই কাজ খুঁজছি, আর অনেক রকম অভিজ্ঞতা ও হচ্ছে।অনেক সোর্স ওলা বড় মানুষেরা আমার মতো গরীব চাকুরী শিকার সন্ধানীদের তাড়ানর জন্য কুকুর লেলিয়ে দেনঅনেকে আবার ঠিক অতটা রুঢ় না হয়ে বাড়ির ছোট ছেলেপুলে দের লেলিয়ে দিয়ে, চকলেটটা, আইসক্রিমটা, বায়না করান। তবে ভূতের ছানাটা একেবারে লেটেস্ট    
কাল আনব বলে তখনকার মতো পালিয়ে বাঁচলাম।কিন্তু বাসায় এসে মনটা খচখচ করতে লাগল। হাজার হোক নিঃসঙ্গ একটা অসুস্থ্ বাচ্ছাকে যখন কথা দিয়েছি, তা রাখতেই হবে।কিন্তু ভূতের ছানা  পাই কোথায়?কথাটা আমার রুমমেট কে বলতে সে হেসে বললে-“বাঃ হেভী লেভেল দিয়েছে তো বাচ্ছাটা, শোন তুই এখন থেকে ওখানে যাওয়া বন্ধ কর”। বললাম- কেন?   
-“কেন আবার? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে ওর বাবা তোকে ঝেড়ে ফেলার জন্যে ছেলেকে দিয়ে এসব বলিয়েছে”আমি বললামি-“ না, ওরকম ছল চাতুরী তথা কথিত ভদ্রলকেরাই করে। আন্ডার ওয়ার্ল্ড  দুনিয়ার লোকেরা বাজে সময় নষ্ট করে না। যাকে অপছন্দ , সোজা তার মুণ্ডুটা নামিয়ে দেয়, আর  সেটাই দস্তুর”  
–“ তুই তা হলে ভূতের ছানা খুঁজবি”?
-“আলবাত খুঁজব।এবং সেটা এখান থেকেই শুরু করব”
“তা কর, তবে কোন লাভ হবেনা। আরে ভূত থাকলে তো তবে তাদের ছানা পোণার কথা”?  
 আমি বললাম-“ভূত যদি না থাকবে তবে সরকারী পয়সায় ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ হয় কী ভাবে? সুতরাং ভূত আছে।এবং তাদের বাপ যখন আছে, তখন ছানাপোনা ও বৌ বাচ্ছা থাকার সম্ভাবনা ও শতকরা একশ ভাগ”।
-“ঠিকাছে ভূতের ছানা যদি থেকেও থাকে তারা শুধু শুধু ধারা দেবে কেন? আর যদি ধরা দেয়ও তবে তোর কথায় ওই বাচ্চাটার সঙ্গে খেলতেই বা রাজি হবে কেন”?    
ওর কথার যুক্তি যে নেই তা নয়, তবে চেষ্টা তো করতেই হবে।   
 সারা রাত চিন্তা করে করে ভাল ঘুম হল না। ভোর বেলা  উস্কখুস্ক চুল, বসা চোখ নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো উদাস হয়ে বারাণ্ডার রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।বাড়িওয়ালার মেয়ে ছবির সঙ্গে দেখা।ও মর্নিং কলেজে বেরনর আগে কলঘরে যাচ্ছেভারি ফাজিল মেয়ে, আমায় দেখে হেসে বললে-“কী কাকু কাকীর লগে ঝগরা হইসে নিহি?মুখ খান অমন শুকনা শুকনা ক্যান”? একে আমি মরছি নিজের জ্বালায়, ইনি  আবার এলেন ইয়ার্কি দিতে? বললাম- “খবরদার বলছি কাকু বলবি না।আমি তোর থেকে বড়জোর দুই কি তিন বছরের বড়।কাকু কিরে? দাদা বলতে পারিস না?সে মুখ বেঁকিয়ে বললে-“ হুঃ দাদা? একদিনও ঝাল মুড়ি ফুচকা খাওয়াইলে না, আবার দাদা”?ঝট করে আমার মাথায় খেলে গেল যে অনেক ব্যাপারে ছেলেদের থেকে মেয়েদের মাথা ভাল খেলে। মিষ্টি করে বললাম –“এই ছবি শোন একটা খুব খ্যাচা কলে ফেঁশে গেছি, একটু বুদ্ধি দিবি”?ছবি খুব সিরিয়াস মুখ করে দাঁড়িয়ে গেল। বললে-“ যা  বলার তারাতারি বল।কলঘরে লাইন পইড়া যাবে” বললাম তুই তাহলে ঘুরেই আয়।তারপর বলব।অনেক বড় ব্যাপার তাড়াতাড়ি হবে না”।ছবি চলে যেতে আবার চিন্তা শুরু হল,-“ হ্যাঁ ছেলেটা আর বায়না খুঁজে পেল না?শেষে কিনা ভূতের ছানা? ভূতের ছানা কি আর কুকুর ছানা না ছাগল ছানা? যে গলায় গামছা বেঁধে হ্যাট হ্যাট করে তাড়িয়ে নিয়ে যাব? ধাড়ি হউক বা ছানা? দস্তুর মত একটা ভূত বলে কথা? তাপর ছানা নিয়ে টানা টানি করলে  তাদের বাপ মায়েরা কি ছেড়ে কথা বলবে? দেখি ছবি কি বলে?
ছবি ফিরে এসে বলল-“এবার বল”? যতটা সংক্ষেপে সম্ভব বললাম।এক মিনিট চিন্তা করেই ও আমার কানে কানে আইডিয়াটা দিয়েই ও বারাণ্ডা ধরে ছুটে চলে গেল। আর যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলল -“আজ সন্ধ্যায় ফুচকা খাওয়াতে  হবে কিন্তু। আশ্চর্য  মাথা  বলতে হবে  মেয়ের? যাইহোক ওর কথা মতো লাল নীল ছোট  ছোট কয়েকটা মাছ সহ একটা জল ভর্তি বয়ম নিয়ে হাজির হলাম সেখানে। ছেলেটি কে ডেকে ওটা দিতে, সে কিছুক্ষণ মাছ গুলর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাসা করল- “এরা কি ভূতের ছানা”?
আমি অম্লান বদনে বললাম- “ হ্যাঁমহিষাসুর যেমন মহিষের পেটে লুকিয়ে ছিল,ভূতের ছানারা ও  তেমনি এই মাছের ছানাদের পেটের ভিতর লুকিয়ে আছে”।  
ও জানতে চাইল- “ এরা কি খায়”?
ছোট্ট একটা ড্রাই ফুডের কৌট দেখিয়ে বললাম “ ওরা এটা আর চাঁদের আলো খায়”।  
চাঁদের আলো খায় শুনে  ছেলেটির বিষণ্ণ নিষ্প্রভ  মুখে একটা হাসি্র ঢেউ খেলে গেল।
 সে আনন্দে দুহাত তুলে নাচতে লাগল। তার আনন্দ দেখে আমি এমনই মোহিত হয়ে পড়েছিলাম যে টের পাইনি, কখন একজন মুখে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি ওলা গোলগাল ফর্সা ভালো মানুষ চেহারার ভদ্রলোক ঘরে ধুকেছেন।ইনি নিশ্চই ছেলেটির পিতা।
অথচ এঁর মধ্যে মাফিয়া মাফিয়া ভাব একেবারেই নেই।তাই আমি আবাইলাম। তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলাম। 
              
  তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

  পয়লা বৈশাখ ১৪২২ সন           

Wednesday, 18 March 2015

                          ভৌম দোষ ও তা ভঙ্গ
.....................................................................................
১) লগ্নের ২য় ও ৭ম স্থান পাপ গ্রহ যুক্ত হ’লে পতি/ পত্নী হানি যোগ হয়। (কিন্তু বর ও বৌ উভয়ের জন্ম পত্রিকাতে এই একই যোগ থাকলে তা ভঙ্গ হয়।)
২) মঙ্গল ৭মে থাকিলে জাতকের ৭মস্থ মঙ্গলকে শনি দেখলে নিশ্চই স্ত্রী হানি হয়।(কিন্তু বহু শুভ দৃষ্ট হইলে স্ত্রী হানি হয় না)।
৩) ভৌমবরত্তি দোষ- লগ্ন, ৪রথ, ৭ম, ৮ম, ১২শ, উহার যে কোন স্থানে  মঙ্গল থাকিলে পুরুষের স্ত্রী হানি এবং বধূর পতি হানি যোগ হয়।কিন্তু যদি ঐ মঙ্গল শুভাধিক- বর্গ গত হইলে অরথাত মঙ্গল উচ্চ, মুলত্রিকোন, স্বগৃহ, মিত্রগৃহস্থি্ত হইয়া শুভ দৃষ্ট হন, কিংবা উক্তরূপ শুভ স্থানে কেন্দ্র-কোনাধিপ-মঙ্গল বলবান শুভগ্রহদৃষ্ট বা মিত্রগ্রহদৃষ্ট হইয়া গুনবাহুল্যযুক্ত হন অথবা উভয়েরই মঙ্গল পরস্পর পতি/ পত্নী হানি যোগে থাকিয়া একরূপ ধরমাক্রান্ত হন, সেরূপ স্থলে ভৌমদোষে বিবাহ কোন অনিষ্ট হয় না। ৪) কোন এক নিয়মে পুরুষের যদি পত্নী হানি যোগ থাকে ও অন্য নিয়মে কন্যার বৈধব্য থাকে সেখানে পরস্পর দোষ ভঙ্গ হবে ও বিবাহ দেওয়া যাবে।
৫) উপরিউক্ত (৪) নিয়ম ভৌম দোষের ক্ষেত্রে খাটবেনা। সেখানে ভৌম দোষে ভৌম দোষে কাটাকাটি প্রয়োজন।আরথাত বর/ বৌ উভয়ের কুষ্ঠীতেই ভৌম দোষে থাকা দরকার।(গুন বাহুল্য যুক্ত মঙ্গলে ভৌম দোষ বর্তায়না।)
৬) তবে এরূপ যদি হয় যে, বধূর ভৌম দোষ আছে, অথচ তাহার লগ্নের ৭মে বা চন্দ্রের ৭মে বলবান শুভগ্রহ বা বলবান সপ্তমাধিপ আছেন এবং গুরু-শুক্র কেন্দ্র-কোনে; সেরূপ স্থলে পুরুষের ভৌম দোষ না থাকিয়া যদি অন্য নিয়মে  ( ৭মে রাহু ও শুক্র পাপ যুক্ত ) স্ত্রী হানি যোগ থাকে, তবে উক্ত ভৌমদোষযুক্তা বধূর বিবাহে অনিষ্ট হয় না।

৭) ভৌম দোষ পরিহার- বৃহজ্জোতিঃসার- গ্রন্থে উক্ত হিয়াছে যে, লগ্ন,৪রথ, ৭ম, ৮ম, ১২শ, ইহাদের কোন স্থানে শনি বা রাহু থাকিলে (যেমন বিষে বিষক্ষয় হয় তেমনি) উক্ত স্থানস্থিত ভৌম দোষ নষ্ট হয়। যদি বধূর লগ্নে মঙ্গল ও ৭মে রাহু বা শনি থাকে তাহলে পতি-সৌভা্গ্য-স্থান অতি অশুভ বলিয়া বিবেচিত হয় বটে, কিন্তু বস্তুত ভৌম দোষ নষ্ট হয় ও শুভ হয়।        
(জ্যোতিষ-কল্প বৃক্ষঃ- পৃষ্ঠা ৫২০)
৮) বরাহ মিহির তাঁহার ‘ বৃহজ্জাতক’ গ্রন্থের ২৪শ অধ্যায়ে বলিয়াছেন-
“তাসান্তু ভরত্তৃমরণং নিধনে বপস্তু লগ্নেন্দুগমিত্যাদি”- অরথাত লগ্ন হইতে অষ্টম ভাবে স্ত্রী গনের বৈধব্য- বিচার এবং লগ্ন-চন্দ্র উভয় হইতে শরীরের শুভাশুভ বিচার করিতে হয়। জ্যোতিঃশাস্ত্র মতে ভাব বিচারে দেখা যায় যে, লগ্ন হইতে অষ্টম ভাবে নরনারীর জননেন্দ্রিয় বিচার করা হয়।অতএব ৭ম ভাব হইতে যৌন- চেতনা (কাম) এবং ৮ম ভাব হইতে জীবনী শক্তি ক্ষয় বা যৌনাকর্ষণ বিচার করা হয়। ৮ম ভাব একদিকে যেমন নূতন জীবের সৃষ্টি করে, অন্যদিকে তেমনি একটি পূর্ণ জীবনের ক্ষয় করিয়া থাকে। ৮ম ভাব হইতে আয়ুরব্বিচার করিবার ইহাও একটি প্রধান কারন। অতএব ৭ম ভাব হইল কাম বা যৌ্নচেতনা্র আধার বা অবলম্বন- স্ত্রী বা স্বামী। পক্ষান্তরে ৮ম ভাব হইল যৌনাকর্ষণের জীবনী শক্তি ক্ষয়ের অবলম্বন- জননেন্দ্রিয়। মঙ্গলের ন্যায় উগ্রশক্তি সম্পন্ন গ্রহ যদি ৮মে থাকে, তাহা হইলে নরনারীর যৌনাকর্ষণের স্নায়ু সমূহ উগ্রতেজ সম্পন্ন হয়।তাহার ফলে পূর্ণ সাস্থ্যবান পুরুষ যদি ৮ম ভাবগত  মঙ্গল- প্রভাবিত স্ত্রীর  সহিত যৌনধর্ম রক্ষা করে, তাহা হইলে সেই পুরুষের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জীবনী শক্তিক্ষয় হইয়া ব্যাধি হয়, এমনকি অকাল মৃত্যু ঘটিয়া থাকে।একই যোগে পুরুষের লগ্নের ৮মে মঙ্গলের ন্যায় উগ্রশক্তি সম্পন্ন গ্রহ থাকলে স্ত্রীর স্বাস্থ্য হানি বা অকাল মৃত্যু হতে পারে।এখানে ভৌম দোষ খণ্ডনের জন্য মিলিয়ে বিবাহের বিধান দেওয়া হয়, যদি কোন শুভ গ্রহের প্রভাব ওই মঙ্গলের উপর না থাকে,তাহা হইলে উভয়ে ব্যাধিগ্রস্ত হয়। দম্পতির অকালমৃত্যু হয়।  
কন্যার বৈধব্যদোষের খণ্ডন হইল – স্বাস্থ্যবান দীর্ঘায়ু যুক্ত পাত্রের সহিত বিবাহ দেওয়া।দম্পতির পরস্পরের ৮মে পাপগ্রহের মিলনে বিবাহ হইলে অশান্তি অনিবার্য। বর ও বধূর উভয়ের জণ্ম রাশি, লগ্ন্‌, লগ্নাধিপতি, ও রাশ্যাধিপতি যদি ষড় অষ্টম যোগে থাকে তাহলে কলহাদি ও অশান্তি অমঙ্গল হয়ে থাকে।      

 তরুণ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। (জ্যোতিঃশাস্ত্রী)